সিন্ডিকেটের মাসোহারা ত্রিশ লাখ টাকারও বেশি, সাবরেজিস্টার বলছেন,“সব নিয়ন্ত্রণে নেই আমার হাতে”
রাজবাড়ী জেলার পাংশা সাবরেজিস্টার অফিসে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিমাসে কৌশলে আদায় করা হচ্ছে ত্রিশ লক্ষ টাকারও বেশি অবৈধ মাসোহারা। স্থানীয় দলিল লেখক, কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীদের ভাষায়, অফিসটি এখন “দুর্নীতির এক কেল্লা”।
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে পুরো অফিস..
সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসটি এখন ক্ষমতাবান এক সিন্ডিকেটের দখলে। নেতৃত্বে রয়েছেন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কুদ্দুস জামান, যিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে প্রশাসনের নাগালের বাইরে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, প্রতিটি দলিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘চাঁদা’ না দিলে কাজ বন্ধ থাকে। এক কর্মকর্তা বলেন, “কুদ্দুস জামান প্রতিদিন অফিসে এসে সাবরেজিস্টারকে দুই মিনিটের মধ্যে বদলি করার হুমকি দেন।”
সাবরেজিস্টার মোমেন মিয়ার অসহায়তা
দুর্নীতির বিষয়ে জানতে সাবরেজিস্টার মোমেন মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মন্জুয়ারা বেগম বলেন, “ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয়।” মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাবরেজিস্টার মোমেন মিয়া বলেন,সব কিছু নিয়ন্ত্রণে নেই আমার হাতে। চেষ্টা করি, কিন্তু বদলির ভয়ে কিছু করা যায় না।”
নয়টি পদে অধিকারী’ সভাপতি..
যোগাযোগ করা হলে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কুদ্দুস জামান নিজেকে জাতীয়তাবাদী জিয়া সংসদ রাজবাড়ী জেলা সভাপতি, এবং বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নয়টি পদের অধিকারী বলে দাবি করেন। দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চটে যান এবং হুমকি দেন, পরে আর যোগাযোগ রাখেননি।
জেলা রেজিস্ট্রার ‘অবগত নন’,জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করলে এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দালালমুক্ত অফিসের দাবি
সাধারণ দলিল লেখক ও সেবা প্রার্থীরা জানান, সিন্ডিকেট ও দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন ছাড়া ন্যায্য সেবা পাওয়া অসম্ভব। তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন,
জুলাই-২৪ গণঅভ্যুত্থানের চেতনা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে এমন দালাল ও সিন্ডিকেটমুক্ত অফিস গড়ে তুলতেই হবে।”
পাংশা সাবরেজিস্টার অফিসে এই দুর্নীতির চক্র শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক প্রভাবেও সুরক্ষিত বলে অভিযোগ। সাধারণ মানুষ আশা করছে,সরকারের শুদ্ধি অভিযান এবার অফিস ঘরে পৌঁছাবে, যেখানে ‘চুক্তিপত্র’ নয়, ‘চাঁদার খাতা’ই এখন মূল দলিল।

















