নিজস্ব প্রতিবেদক।। সরকারি সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে যারা, তারাই এখন সম্পদ বিক্রির কারিগর!এবার আলোচনায় বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপো,যাদের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়ঙ্কর অভিযোগ,সরকারি বাস খুলে খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে খুলনায়!
ঘটনা শুরু ২০১৯ সালে…
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ঢাকার টঙ্গি এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক ইজারাদার ঢাকা মেট্রো ব- ২১৯৪ নম্বরের সরকারি বাসটি দীর্ঘমেয়াদি ইজারায় পান। তিনি খুলনা-পাথরঘাটা রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করতেন।কিন্তু বিআরটিসি হঠাৎ করে চলতি বছর সেই দীর্ঘমেয়াদি ইজারা বাতিল করে দেয়।
রফিকুল ইসলাম এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন (নং: ১২৫৯০/২৫) করেন। রিটটি শুনানির পর দ্বৈত বেঞ্চ,মাননীয় বিচারপতি কাজী জিন্নাত হক ও আনুননা সিদ্দিকা,রিট খারিজ করে দেন।
আদালতের নির্দেশের পরের কারসাজি…
রিট খারিজের পর বিআরটিসির ঢাকা হেড অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মেজর নিজামউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ জারি করেন। আদেশে বলা হয়,
হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক, খুলনা-পাথরঘাটা রুটে চলাচলরত ঢাকা মেট্রো ব-২১৯৪ নম্বর বাসটি রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে বরিশাল বিআরটিসি ডিপো ইনচার্জের অনুকূলে হস্তান্তর করতে হবে। এই আদেশটি স্মারক নং ৮৬৪-এ উল্লিখিত।
কিন্তু বাস্তবে যা ঘটলো..
বাসটি বরিশাল ডিপোতে ফেরত নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং ডিপোর একদল কর্মকর্তা ও স্থানীয় সিন্ডিকেট মিলে ওই বাসটি দুই মাস ধরে খুলনা-পাথরঘাটা রুটে অবৈধভাবে চালায়,যাত্রী পরিবহন করে, ভাড়া তোলে, আবার রাজস্ব ভাগাভাগিও করে নেয়! অর্থাৎ সরকারি রাজস্ব গেল হাওয়ায়, কিন্তু কারও পকেট ফুলল বেশ ভালোভাবেই!
একাধিক সূত্র দাবি করেছে,এই সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনা নেয়া হয় বাসটি “শেষ করে দেওয়ার”।শেষমেশ, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার এক জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে চাকা, ইঞ্জিন, বডি,সব খুলে খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়!
প্রমাণের টুকরো টুকরো ধোঁয়া…
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাসটি রাতের আঁধারে খুলে নেওয়া হয়। পরে আলাদা আলাদা ওয়ার্কশপে এর যন্ত্রাংশ বিক্রি করা হয়। কিছু অংশ গেছে স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীদের কাছে, কিছু গেছে পুরনো গাড়ি মেকানিকদের কাছে। কাগজে বাসটি এখনো ‘বরিশাল ডিপোর নিয়ন্ত্রণে’, বাস্তবে সেটা এখন লোহার দোকানের তাকের একেকটা নাট-বল্টু!
কর্তাদের রহস্যময় নীরবতা…
বরিশাল বিআরটিসি ইউনিট ইনচার্জ জুলফিকার এর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি বিষয়টা জানি না ঠিকভাবে, খোঁজ নিয়ে বলবো। কিন্তু কদিন কেটে গেলেও তিনি কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
অন্যদিকে, বিআরটিসি চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব আবদুল লতিফ মোল্লা বলেন..আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই।
প্রশ্ন হলো..
এত বড় ঘটনার খবর যদি চেয়ারম্যান পর্যন্ত না পৌঁছায়, তাহলে এই চেয়ারে বসে তিনি করছেনটা কী? আর যদি জানেন, তবে চুপ কেন?
বরিশাল ডিপো- দুর্নীতির দুর্গ..
বরিশাল বিআরটিসি ডিপোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে..
ইজারা বাণিজ্য
টিকিট বিক্রিতে ঘুষ
জ্বালানি চুরি
গ্যারেজে মিথ্যা রিকুইজিশন,সবকিছুর সঙ্গে এক ধরনের ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট’ জড়িত,যাদের নাকি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতি ও কিছু কর্মকর্তার সুরক্ষা আছে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,এখানে যারা দুর্নীতি করে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে চাকরি বাঁচে না। যেই মুখ খোলে, পরদিন ট্রান্সফার।”
অনুসন্ধানের সারমর্ম…
বরিশাল বিআরটিসির এই ‘বাস কেলেঙ্কারি’ কেবল একটি যানবাহন বিক্রির ঘটনা নয়, বরং এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিতর থেকে সম্পদ চুরি ও প্রশাসনিক নৈতিকতার সম্পূর্ণ ভাঙনের প্রতিচ্ছবি।হাইকোর্টের আদেশ মানা হয়নি, বরং তার সুযোগ নিয়ে সরকারি সম্পদ ভাগাভাগি হয়েছে।
এখন প্রশ্ন একটাই..
এই দেশের সরকারি সম্পদ কি আর সরকারেরই থাকে? নাকি এখন সবই “কাজের ফাঁকে কামাই” নীতিতে চলে?
পরিশেষো,বরিশাল বিআরটিসির এই নাটক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়,এখানে বাস শুধু চলে না, চলে যায়,ইঞ্জিন খুলে বিক্রি হয়, আর দুর্নীতি ঢাকতে বলা হয়,“আমি কিছু জানি না!”










