নিজস্ব প্রতিবেদক।। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) এখন তোলপাড়! উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. মিজানুর রহমান হঠাৎ রাতের আধারে এমন এক ‘গোপন অভিযান’ চালালেন,যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গোপন প্রশাসনিক নথি তিনি নিজের ফেসবুক আইডির স্টোরিতে আপলোড করে দেন, আর তাতেই ঝড় ওঠে শিক্ষক–কর্মকর্তা–শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

সকালে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল অফিসিয়াল প্যাডে লেখা গোপন পত্র, রেজিস্ট্রারের চিঠি, রেকর্ড শাখার ফাইল,সব কিছুই ভাইরাল হয়ে গেছে! বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রশাসনিক ভবনে শুরু হয় তুমুল ফিসফাস, কে কার ছবি তুলছে, কে কার কাছে পাঠাচ্ছে,এ যেন এক অঘোষিত তথ্যযুদ্ধ!
কি ছিল সেই গোপন নথিতে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, পিএস মিজানুর রহমান ২৮ অক্টোবর রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন ফাইলের ছবি প্রকাশ করেন।
ছবিগুলোর মধ্যে ছিল!

[]রেজিস্ট্রার দপ্তরের অফিসিয়াল পত্র,
[]রেকর্ড শাখার অফিসিয়াল কপি,
এবং কিছু দাপ্তরিক তথ্য যা শুধুমাত্র অফিসের ফাইলেই থাকার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন…
এই ফাইলগুলো সাধারণত খুব গোপনীয়। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও নির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার বাইরে কেউ এগুলো দেখতে পারেন না। ফেসবুকে এগুলো প্রকাশ করা প্রশাসনিক অপরাধের শামিল।

শিক্ষক–কর্মকর্তাদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া…
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন,যেখানে একজন পিএস নিজেই গোপন নথি ভাইরাল করে ফেলেন, সেখানে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য আর কতটা নিরাপদ?”
আরও এক কর্মকর্তা বলেন..
এখন থেকে হয়তো প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ফেসবুকেই জানতে হবে,বিজ্ঞপ্তি নয়, সরাসরি স্টোরিতে!
সাংবাদিক সমিতির প্রতিবাদ ও বিবৃতি…
বরিশাল ইউনিভার্সিটি জার্নালিস্টস’ অ্যাসোসিয়েশন (BUJA) এক ফেসবুক পোস্টে কঠোর ভাষায় এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন ফাইল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা একটি গুরুতর প্রশাসনিক অপরাধ। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এই বিবৃতির পরই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আরও তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়।
আমি দোষী নই’- দাবি পিএসের – তবুও স্টোরি ছিল তার নামেই!
ঘটনার পর অনেকেই পিএস মিজানুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি নাকি বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু দিইনি। হয়তো ভুলবশত আপলোড হয়ে গেছে।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো…
রাতের অন্ধকারে অফিসিয়াল প্যাডে লেখা চিঠি, সিল মারা কাগজ, এমন নিখুঁত কোণ থেকে তোলা ছবি,সবই কি ভুল করে আপলোড হয়? প্রশাসনের ভেতরের অনেকে তাই বলছেন,এটা ভুল নয়, বরং ভিতরের কোনো অস্থিরতা বা অসন্তোষ থেকেই করা হয়েছে।
প্রশাসনের নীরবতা ও তদন্তের দাবি…
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানা গেছে, বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এটা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের মারাত্মক উদাহরণ। আমরা লিখিতভাবে প্রতিবেদন জমা দেব। অন্যদিকে উপাচার্যের কার্যালয় থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া-ববি প্রশাসন এখন ফেসবুকে!
শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে কটুক্তি করে বলছে,আগে নোটিশ বোর্ডে খবর আসতো, এখন ফেসবুক স্টোরিতে আসে!এটাই ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়!”
আরেকজন শিক্ষার্থী মজা করে বলেন,এখন বুঝলাম কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনের দরকার নেই,সব তথ্য তো স্টোরিতেই মিলছে!”
সম্ভাব্য এর প্রভাব..
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নথি গোপন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন নথি ফাঁসের ঘটনায়,
১️[]প্রশাসনিক গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে,
২️[]বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে,
৩️[]এবং ভবিষ্যতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভয়–অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি প্রশাসনিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যার জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্তের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পরিশেষে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন ফাইল এখন ফেসবুক ভাইরাল, প্রশাসনের নীরবতা, পিএসের ব্যাখ্যা, আর শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গ,সব মিলিয়ে এটি এখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে গোপন নথি-পাবলিক ভাইরাল বিশ্ববিদ্যালয়” নামেই হয়তো সবাই চিনবে ববিকে!










