নিজস্ব প্রতিবেদক।। সরকারি চেয়ারে বসে বেসরকারি টেবিলের বেতনভোগী! ঠিকাদারি নেটওয়ার্কে ফাইল, তথ্য আর মাসিক চল্লিশ হাজারের “ম্যাজিক”।
বরিশালের প্রশাসনিক অঙ্গনে এখন ঘুরছে এক অদ্ভুত গল্প। নাম তার – জাকারিয়া, নগরীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী। সরকারি চাকরির মর্যাদাপূর্ণ আসনে বসেও নাকি তার মনের অর্ধেকটাই ব্যস্ত ঠিকাদারি অফিসে!
স্থানীয় সূত্রগুলো একে ব্যঙ্গ করে বলছে, এই শহরে একজনই আছেন যিনি সরকারি অফিসের বেতন নেন রাষ্ট্র থেকে, কিন্তু অফিস করেন ঠিকাদারের দরপত্রঘরে!”
অভিযোগের খাতায় আরও রোমাঞ্চকর তথ্য আছে,এই জাকারিয়া নাকি নিয়মিতভাবে “দপ্তরের গোপন কাগজ”প্রকল্পের বাজেট” আর “দরপত্রের সূচি” নির্দিষ্ট এক ঠিকাদার গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে দেন। ঠিকাদারদের ভাষায়,তিনি হচ্ছেন “ইনসাইড ম্যান”-অফিসের ভেতরের আগুন প্রথমে যার হাতে জ্বলে ওঠে।
সূত্র বলছে..প্রতিমাসে নাকি এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেবিল থেকে তার নামে চলে আসে চল্লিশ হাজার টাকার ‘মাসোহারা’। কেউ একে বলে ‘উপহার’, কেউ বলে ‘চুক্তি’, আর অনেকে বলেন,সরকারি বেতন যথেষ্ট নয়, তাই দুই মালিকই নিরাপদ!
কিছু পর্যবেক্ষক ব্যঙ্গ করে বলছেন, “বরিশালে এখন নতুন এক পদবী যোগ হয়েছে,দ্বৈত প্রকৌশলী’- অফিসে সরকার, আর বাইরে ঠিকাদার,দু’জনই বস!”
তথ্য ফাঁসের ফাঁদ…
অফিসের মেইল থেকে ফাইল উধাও, দরপত্রের তারিখ ঠিকাদারদের কানে আগে পৌঁছে যাচ্ছে,এসব নিয়ে নগর ভবনে চলছে চুপচাপ গুঞ্জন। কেউ কেউ সরাসরি বলছেন,ফাইল খোলে আগে ঠিকাদারের কফির কাপের পাশে।
কৌতূহলের বিষয়, সরকারি গোপনীয় নথি কীভাবে বাইরে যায়,সে প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ খোলেনি। দপ্তরের করিডোরে নাকি এর নাম দেওয়া হয়েছে, ফাইল এপিট-ওপিট সিন্ড্রোম”,যেখানে এক হাতে সরকারি সিল, অন্য হাতে ঠিকাদারি হাসি।
সূত্রের দাবি, মাঝে মাঝে তিনি সাংবাদিকদের দিকেও আশীর্বাদ” ছড়ান,‘তথ্য’র সঙ্গে সঙ্গে ‘টাকা’রও নরম ছোঁয়া দেন। ফলে, কারো কলম থেমে যায়, কারো কিবোর্ডে লেগে যায় সাইলেন্স মোড।
একজন অভিজ্ঞ সিনিয়র সাংবাদিক ঠাট্টা করে বলেছেন, ওই অফিসে ঢুকলে বোঝা মুশকিল,কে সরকারি কর্মচারী, কে ঠিকাদারের মার্কেটিং অফিসার!”
প্রশাসনিক নীরবতা…
এই অভিযোগগুলো নতুন নয়। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, বরিশাল নগরীতে সরকারি পদে বসে বেসরকারি সুবিধা নেওয়ার এই সংস্কৃতি এখন “নতুন স্বাভাবিকতা”। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে,এই “নতুন স্বাভাবিকতা”র দায় নেবে কে?
এক প্রবীণ নাগরিক ব্যঙ্গ করে বলেন,
জাকারিয়া আসলে সরকারি লোক নয়, তিনি সরকারি দপ্তরের ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক’। অফিস তার আউটলেট, ঠিকাদার তার বিনিয়োগকারী!
জাকারিয়ার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি,
এই প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত জাকারিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার দপ্তরের অফিসফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রশ্নের জবাবও পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত তার ব্যাবহারীত মোবাইলটি বন্ধ অবস্থায় রয়েছে।
পরবর্তী পর্বে..
“জাকারিয়ার ঠিকাদার বন্ধু” কে?
কোন ফাইল আগে পৌঁছে যায় ‘বাইরে’?
আর কারা রয়েছেন এই গোপন ছত্রছায়ায়?










