পাবনা প্রতিনিধি।। পাবনার চাটমোহরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চলছে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের নব ঘোষিত কমিটি নিয়ে দেখা দিয়েছে এই বিরোধ। এক পক্ষ নব ঘোষিত কমিটিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে কমিটি থেকে ১০ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন।
অপরপক্ষ তাদের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছেন। তার বিরুদ্ধে কমিটি বাতিলের দাবি করা পক্ষের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন।
এ ধরনের কমিটি গঠনের ফলে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (০৯ মার্চ) সকালে চাটমোহর নতুনবাজার খেয়াঘাট ব্রীজ এলাকায় কৃষকদলের পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা নব ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বিলচলন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলামিন হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, বিলচলন ইউনিয়ন তাঁতিদলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, বিলচলন ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক হাসেম আলী,বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের সাবেক নেতা আব্দুস সালাম, বিলচলন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার সিতার আলী, বিলচলন ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রেজাউল মেম্বর, ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বর মিলন হোসেন, বিলচলন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন প্রমুখ।
বক্তারা অবিলম্বে বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের নব ঘোষিত কমিটি বাতিল করে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়ন কৃষকদলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা কৃষকদল। কমিটিতে সভাপতি পদে নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি বাবু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন ও প্রচার সম্পাদক পদে আলহাজ হোসেন এর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কিন্তু বিলচলন ইউনিয়ন বিএনপি’র আহ্বায়ক আফছার আলী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেসুর রহমান সহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ‘কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবঘোষিত কৃষকদলের সভাপতি নজরুল ইসলামের বাড়িতে নৌকার অফিস ছিলো। বিগত ১৬ বছরে তারা কোনদিন বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। তারা সবসময় আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও কমিটি বাতিলের দাবিতে গত বুধবার (০৫ মার্চ) কৃষকদলের নব ঘোষিত কমিটি থেকে ১০ জন পদত্যাগ করেন। একইসঙ্গে তারা ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তার প্রতিবাদে শনিবার (০৮ মার্চ) দুপুরে বিলচলন ইউনিয়নের কুমারগাড়া গ্রামে প্রতিবাদ সভা করেন অভিযুক্ত ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম। সেখানে তিনি দাবি করেন, তিনি কখনই আওয়ামী লীগ করেননি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে তিনি কৃষকদল থেকে পদত্যাগ করবেন। আর রোববার (০৯ মার্চ) অপরপক্ষ কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধন করলেন।
কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটমোহর উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। কমিটিতে না আসতে পেরে হয়তো তারা এ ধরণের অভিযোগ করেছে। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ক্যাপশন: ইউনিয়ন কৃষকদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। রোববার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার কুমারগাড়া গ্রামে।