নিজস্ব প্রতিবেদক।। পতিতার ব্যবসা, সেখানে প্রশাসনের দোয়া,এই সোনালী সূত্রের জীবন্ত উদাহরণ বরিশাল নগরীর পোর্টরোডের স্বিপন ওরফে ‘পতিতা স্বিপন’।এক সময় ছিলেন সাধারণ হোটেল কর্মচারী, আজ পাঁচটি হোটেলের মালিক।এই অলৌকিক উত্থান নাকি সম্ভব হয়েছে স্টিমারঘাট ফাঁড়ির কল্যাণে অর্থাৎ পুলিশের দোয়ায় পতিতা এখন কোটিপতি!
পোর্টরোডে স্বিপনের হোটেল সাম্রাজ্য-বাইরে হোটেল, ভিতরে লালসার আখড়া!
স্বিপনের মালিকানায় এখন বরিশাল নগরীর আলোচিত কয়েকটি হোটেল, হোটেল স্বাগতম, সি প্যালেস, রয়েল, খান বোডিং ও চাঁদমারীর চারু। নামে হোটেল, কিন্তু বাস্তবে এগুলো যেন রাত্রিযাপন কেন্দ্র”,যেখানে ঘুম আসে না, আসে সঙ্গী, আসে মাদক, আসে লেনদেন।
স্থানীয়রা ঠাট্টা করে বলেন,
স্বাগতমে গেলে ঘুম হারাম, রয়েলে গেলে ইয়াবা কাম, আর সি প্যালেসে গেলে মনোরঞ্জনের জাহাজ ভাসে!”এমনকি প্রতিদিন পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ না কেউ নাকি রেট” নিতে আসে। দিনে দুইবার রেট, রাতে ফ্রি সার্ভিস, এমন সুবিধা দেশে কয়জন ব্যবসায়ী পায়?
এক হোটেল কর্মচারী থেকে পাঁচ হোটেলের মালিক, পুলিশের বরকতের নমুনা..
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, “স্বিপন এক সময় স্বাগতম হোটেলের চাকর ছিলো। আজ সে পাঁচটি হোটেলের মালিক। কিভাবে? স্টিমারঘাট ফাঁড়ির পুলিশের বরকতে। পুলিশ যদি পৃষ্ঠপোষক হয়, তাহলে পতিতাও পায় প্রমোশন!
স্বিপনের সহযোগী হিসেবে আছেন মিজানুর রহমান,যার ভাগিনা মেহেদী হাসন ইয়াবাসহ ধরা পড়েছিলো। কিন্তু স্বিপন? তার কিছু হয় না, কারণ সে পুলিশের ‘ভিআইপি কাস্টমার’!
মাদক, জুয়া আর নারী,তিনে মিলে হোটেল রাজনীতি
স্থানীয় সূত্র বলছে, স্বিপনের প্রতিটি হোটেলে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে “অভ্যন্তরীণ বাজার” দিনে ইয়াবা বিক্রি, রাতে নারী বেচাকেনা, মাঝখানে জুয়ার আসর।যে হোটেলে ঢোকে, সে হয় বেহেশতের অতিথি,আর বেরিয়ে আসে দেউলিয়া আত্মা হয়ে।
প্রশ্ন উঠেছে, এসব দেখেও পুলিশ চুপ কেন?
উত্তর মেলে স্বিপনের মুখেই। সাংবাদিকদের তিনি গালাগাল করে বলেন,আমার হোটেলে অনেক সাংবাদিক বিশ্রাম নিতে আসে। দিনে দুইবার প্রশাসন রেট নেয়।”অর্থাৎ,রেট”-এর বিনিময়ে ন্যায়বিচারও বিশ্রাম নেয়!
অভিযান এলে পতিতা লাফ দেয়, পুলিশ নীরব থাকে!
কয়েকদিন আগে স্টিমারঘাট ফাঁড়ির পুলিশ অভিযান চালালে স্বিপনের হোটেল খান বোডিং থেকে এক কিশোরী পতিতা আতঙ্কে দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দেয়। আহত অবস্থায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকা রেফার করা হয়।কিন্তু স্বিপন?ঘটনাটা চাপা দিতে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়!
এমনকি স্থানীয়রা বলছেন, তার নামে পতিতা ব্যবসা, মানবপাচার, মাদক,সব মিলিয়ে এক ডজন মামলা আছে, কিন্তু পুলিশ এখনো যেন প্রেমিকের মতো পাশে!
সাংবাদিকদের বিশ্রাম নাকি মনোরঞ্জন?
যখন স্বিপনের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন রাখলেন,তার হোটেলে পতিতা ব্যবসা চলে কিনা, তিনি হেসে বললেন,“আমার হোটেলে অনেক সাংবাদিক বিশ্রাম নিতে আসে!”
এখন প্রশ্ন…
বরিশালের সেই “বিশ্রাম নেওয়া সাংবাদিকরা” আসলেই বিশ্রাম নেন, নাকি ‘রুম সার্ভিস’-এর অন্য রূপ উপভোগ করেন?
পুলিশের ফোনে সাইলেন্স, জনগণের মনে ক্ষোভ,স্টিমারঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাসিমকে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন,
স্বিপন হঠাৎ করেই ১টি থেকে ৫টি হোটেলের মালিক হলো। তার সহযোগী মিজান প্রতিটি হোটেলে পার্টনার। পুলিশ আর প্রশাসনের দোয়ায় সে এখন কোটিপতি।”
একজন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী কটাক্ষ করে বলেন,
এখন বরিশালে ব্যবসা শুরু করতে হলে পতিতা না হয়েও পতিতা হতে হয়! কারণ স্টিমারঘাটে নৈতিকতা টিকে না, শুধু টাকার গন্ধ টিকে জিরো থেকে হিরো’ নয়, ‘পতিতা থেকে প্রভাবশালী’ গল্প, স্বিপনের এই রূপকথা আসলে বরিশাল নগরীর নগ্ন বাস্তবতা।
যেখানে মাদক বিক্রি হয় আইনের ছায়ায়, যেখানে পতিতা বেচাকেনা হয় পুলিশের পাহারায়, আর যেখানে সাংবাদিকরা ‘রুম সার্ভিস’-এর অতিথি হয়ে সত্যকে ঘুম পাড়ায়।
এটাই সেই বাংলাদেশ, যেখানে অপরাধীরা হোটেল বানায়, আর ন্যায়বিচার ভাড়া খাটে ঘন্টার হিসাবে।
পরবর্তী পর্বে.. স্বিপনের আড়ালের রাঘববোয়াল: পুলিশের কমিশন, মিডিয়ার ম্যানেজ, আর পতিতার কণ্ঠে সত্য”











