, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বরিশালে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও অপসাংবাদিকতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ ৩৫ সংগঠন বরিশাল বিআরটিসি- সরকারি বাস নয়, যেন লোহার ব্যবসায়ীদের আড্ডাখানা! রাতের আঁধারে ‘গোপন নথি’ ফাঁস, সকালে ভাইরাল! গোপনীয়তা গেল গাছে’- ববির পিএসের হাতে প্রশাসনের মর্যাদা ধুলায়! মিরপুর বিটিসিএলে ‘গিরগিটি ফেরদৌস’-দিনে আওয়ামী লীগ, রাতে বিএনপি -আর অফিসে কমিশনের রাজত্ব!” বরিশাল মডেল স্কুলে ‘কোচিং স্যার’ তৃষানের রাজত্ব! শিক্ষা নয়, চলছে চাঁদাবাজির ক্লাস-যে পড়বে না, সে ফেল! বরিশাল বিআরটিসিতে ‘চোঙ্গির রাজত্ব’-মাসে ১৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজি! বরিশালে ৫০ বছর পর পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সর্বজনীন শ্রীশ্রী কালী মাতার মন্দির দুই মালিকের এক দাস- বরিশালের প্রকৌশলী জাকারিয়ার চমকপ্রদ রূপকথা! বিআরটিএ এখন ‘রুহুল আমিন কর্পোরেশন’! মিরপুর অফিসে দালালদের ছায়া সরকার, কোটি টাকার খেলায় রাষ্ট্র নির্বাক! বরিশালের “বীরপুরুষ” হাসানাত-দুদকের জালে এবার “অপরাজিত” নেতা!
বিজ্ঞাপন :
সকল জেলায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে

ঝালকাঠিতে চার বছরের রাইসার আর্তনাদ! সৎ মায়ের হাতে নির্যাতন, বাবার নীরব বর্বরতা!

  • প্রকাশের সময় : ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৩ পড়া হয়েছে

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।। নানির কোলে চার বছরের নিষ্পাপ রাইসা। চোখে ভয়, শরীরে আঘাতের দাগ, মুখে একটাই শব্দ,“বাবা মারবে!” এই ভয়ই আজ ঝালকাঠি শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকার এক ছোট্ট শিশুকে কাঁদাচ্ছে, কাঁপাচ্ছে পুরো জেলা।

রাইসার নানা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার আদালতে নালিশ করেছেন নিজেরই জামাতা রাকিব হোসেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি আক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তারা মিলেই চার বছরের রাইসাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে!শিশুটি এখনো আতঙ্কে কেঁপে ওঠে, বাবার নাম শুনলেই বুক কাঁপে,যেন বাবা নয়, কোনো দানব!

আদালতে নালিশ, থানায় ‘মীমাংসার’ খেলা

এই নির্মম নির্যাতনের নালিশ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়।
বাদী নানার সঙ্গে ছিলেন রেসকিউ ল’ চেম্বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান। তিনি জানান,থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত পুলিশকে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।”

কিন্তু পুলিশের খেলা শুরু তখনই…
রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থানায় বসে চলে আলোচনা ও মীমাংসা পরামর্শ!”একজন চার বছরের শিশু হাসপাতালে,আর থানায় চলে শান্তি সম্মেলন! এই কেমন মানবতা?

মায়ের মৃত্যু, সৎ মায়ের নির্মমতা

রাইসার জন্মের বছর না ঘুরতেই তার মা সুমাইয়া আক্তার মারা যান (২০২৩ সালের এপ্রিল)। এরপর খালার কোলে মানুষ হচ্ছিলো ছোট্ট রাইসা, তাকে “মা” বলেই ডাকত।

কিন্তু এখানেই বাবার ক্ষোভ! রাকিব, যিনি ধানসিঁড়ি পরিবহনের এক কন্ডাক্টর, নাকি মেয়ের মুখে “খালা-মা” শব্দ শুনেই রাগে অন্ধ হয়ে যান! সেই রাগেই নাকি চলে মাথায় আঘাত, চোখে রক্ত জমে যাওয়া, আর কান্না-চিৎকারে ভরা এক রাত!

খালা শাহনাজ বেগম বলেন,
রাকিব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি ১ অক্টোবর রাইসাকে মারধর করে। চোখ ফুলে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। ও এখনো ভয় পায়, বলে ‘বাবা আসবে না তো?’”

প্রতিবেশীরাও বলছেন একই কথা

প্রতিবেশী লিজার মা জানান,
কলি রাইসাকে ঘরে রাখতে চাইতো না। রাকিবের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের ঝগড়া হতো। কিন্তু শেষমেশ মেয়েটিই খেসারত দিল।”

অভিযুক্ত বাবার সাফাই-“বাথরুমে পড়ে গেছে!”

বাবা রাকিবের দাবি,রাইসা বাথরুমে পড়ে গেছে। এ যেন সেই পুরনো ডায়লগ,নির্যাতনের পরও নির্দ্বিধায় বলা যায়, কারণ সমাজ চুপ থাকে! তিনি আরও বলেন, আমি কাজের কারণে খুলনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি আমি নাকি মেয়েকে রক্তাক্ত করেছি!

 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে___
যদি সত্যিই ‘পড়ে গিয়ে আঘাত পায়’, তাহলে কেন মেয়েটি এখন বাবার নাম শুনলেই চিৎকার করে ওঠে?

হাসপাতাল থেকে আদালত পর্যন্ত রাইসার লড়াই

রাইসাকে প্রথমে বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চোখে রক্ত জমে ফুলে গেছে, মাথায় আঘাতের চিহ্ন, শরীরে নীল দাগ-যেন ছোট্ট শরীরটি বলছে, আমাকে বাঁচাও!”

 

নানির আর্তনাদ

নানি কহিনুর বেগম কান্নায় ভেঙে বলেন,,আমার নাতনিকে এমনভাবে মেরেছে যে, ৭ দিনেও ঘুমাতে পারে না। চোখ ফুলে গেছে, ব্যথায় কাঁদে। আমি বিচার চাই, আমার রাইসার বিচার চাই।”

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সদর থানার ওসি (তদন্ত) বেলায়েত হোসেনের ব্যাখ্যা-মেয়েটি বাথরুমে পড়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে মীমাংসার পরামর্শ দিয়েছি।”

অর্থাৎ, শিশুর গায়ে আঘাত, হাসপাতালে ভর্তি, আদালতের নির্দেশ- সবই পুলিশের চোখে “পারিবারিক বিষয়”! এই যে মীমাংসার নামে নির্যাতনের প্রশ্রয়- এটাই তো আজ সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধ!

রাইসার জন্য বিচার চাই!

চার বছরের এক শিশু যদি ন্যায় না পায়, তাহলে এই রাষ্ট্রের আইন কীসের জন্য? বাবা হোক বা সৎ মা-অপরাধীকে শাস্তি চাই! রাইসার ভয়কে দূর করতে হলে, সমাজকেই এখন দাঁড়াতে হবে তার পাশে।

বরিশালে সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ও অপসাংবাদিকতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ ৩৫ সংগঠন

ঝালকাঠিতে চার বছরের রাইসার আর্তনাদ! সৎ মায়ের হাতে নির্যাতন, বাবার নীরব বর্বরতা!

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ঝালকাঠি প্রতিনিধি।। নানির কোলে চার বছরের নিষ্পাপ রাইসা। চোখে ভয়, শরীরে আঘাতের দাগ, মুখে একটাই শব্দ,“বাবা মারবে!” এই ভয়ই আজ ঝালকাঠি শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকার এক ছোট্ট শিশুকে কাঁদাচ্ছে, কাঁপাচ্ছে পুরো জেলা।

রাইসার নানা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার আদালতে নালিশ করেছেন নিজেরই জামাতা রাকিব হোসেন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি আক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তারা মিলেই চার বছরের রাইসাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে!শিশুটি এখনো আতঙ্কে কেঁপে ওঠে, বাবার নাম শুনলেই বুক কাঁপে,যেন বাবা নয়, কোনো দানব!

আদালতে নালিশ, থানায় ‘মীমাংসার’ খেলা

এই নির্মম নির্যাতনের নালিশ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা হয়।
বাদী নানার সঙ্গে ছিলেন রেসকিউ ল’ চেম্বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল খান। তিনি জানান,থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত পুলিশকে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।”

কিন্তু পুলিশের খেলা শুরু তখনই…
রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত থানায় বসে চলে আলোচনা ও মীমাংসা পরামর্শ!”একজন চার বছরের শিশু হাসপাতালে,আর থানায় চলে শান্তি সম্মেলন! এই কেমন মানবতা?

মায়ের মৃত্যু, সৎ মায়ের নির্মমতা

রাইসার জন্মের বছর না ঘুরতেই তার মা সুমাইয়া আক্তার মারা যান (২০২৩ সালের এপ্রিল)। এরপর খালার কোলে মানুষ হচ্ছিলো ছোট্ট রাইসা, তাকে “মা” বলেই ডাকত।

কিন্তু এখানেই বাবার ক্ষোভ! রাকিব, যিনি ধানসিঁড়ি পরিবহনের এক কন্ডাক্টর, নাকি মেয়ের মুখে “খালা-মা” শব্দ শুনেই রাগে অন্ধ হয়ে যান! সেই রাগেই নাকি চলে মাথায় আঘাত, চোখে রক্ত জমে যাওয়া, আর কান্না-চিৎকারে ভরা এক রাত!

খালা শাহনাজ বেগম বলেন,
রাকিব ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কলি ১ অক্টোবর রাইসাকে মারধর করে। চোখ ফুলে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। ও এখনো ভয় পায়, বলে ‘বাবা আসবে না তো?’”

প্রতিবেশীরাও বলছেন একই কথা

প্রতিবেশী লিজার মা জানান,
কলি রাইসাকে ঘরে রাখতে চাইতো না। রাকিবের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের ঝগড়া হতো। কিন্তু শেষমেশ মেয়েটিই খেসারত দিল।”

অভিযুক্ত বাবার সাফাই-“বাথরুমে পড়ে গেছে!”

বাবা রাকিবের দাবি,রাইসা বাথরুমে পড়ে গেছে। এ যেন সেই পুরনো ডায়লগ,নির্যাতনের পরও নির্দ্বিধায় বলা যায়, কারণ সমাজ চুপ থাকে! তিনি আরও বলেন, আমি কাজের কারণে খুলনায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখি আমি নাকি মেয়েকে রক্তাক্ত করেছি!

 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে___
যদি সত্যিই ‘পড়ে গিয়ে আঘাত পায়’, তাহলে কেন মেয়েটি এখন বাবার নাম শুনলেই চিৎকার করে ওঠে?

হাসপাতাল থেকে আদালত পর্যন্ত রাইসার লড়াই

রাইসাকে প্রথমে বরিশাল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চোখে রক্ত জমে ফুলে গেছে, মাথায় আঘাতের চিহ্ন, শরীরে নীল দাগ-যেন ছোট্ট শরীরটি বলছে, আমাকে বাঁচাও!”

 

নানির আর্তনাদ

নানি কহিনুর বেগম কান্নায় ভেঙে বলেন,,আমার নাতনিকে এমনভাবে মেরেছে যে, ৭ দিনেও ঘুমাতে পারে না। চোখ ফুলে গেছে, ব্যথায় কাঁদে। আমি বিচার চাই, আমার রাইসার বিচার চাই।”

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সদর থানার ওসি (তদন্ত) বেলায়েত হোসেনের ব্যাখ্যা-মেয়েটি বাথরুমে পড়ে গেছে। নিজেদের মধ্যে মীমাংসার পরামর্শ দিয়েছি।”

অর্থাৎ, শিশুর গায়ে আঘাত, হাসপাতালে ভর্তি, আদালতের নির্দেশ- সবই পুলিশের চোখে “পারিবারিক বিষয়”! এই যে মীমাংসার নামে নির্যাতনের প্রশ্রয়- এটাই তো আজ সমাজের সবচেয়ে বড় অপরাধ!

রাইসার জন্য বিচার চাই!

চার বছরের এক শিশু যদি ন্যায় না পায়, তাহলে এই রাষ্ট্রের আইন কীসের জন্য? বাবা হোক বা সৎ মা-অপরাধীকে শাস্তি চাই! রাইসার ভয়কে দূর করতে হলে, সমাজকেই এখন দাঁড়াতে হবে তার পাশে।